বিগত
১ দশকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপাকভারে বাড়ছে।
পৃথিবীর যেকোনো দেশে পড়তে যাওয়ার জন্য সে দেশে স্থায়ী হবার পদ্ধতি এবং
সময়সীমা জেনে রাখা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এতে সময়, চিন্তা, অর্থ সবকিছুই বাঁচে
এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার অত্যন্ত সহজ হয়। দেশ থেকে আসার আগে আমরা এই ব্যাপারে
খুব বেশি কিছু জানিনা বা জানার আগ্রহ প্রকাশ করি না। অন্যভাবে বললে, এসব
জানার তেমন কোনো অথেনটিক সোর্স ও নাই। কিছু বাটপার এজেন্সি খুলে বিভিন্ন
ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে যার খপ্পরে পড়ছেন অনেকেই। আজকে সে বিষয়ে সংক্ষেপে কিছু
লিখছি।
বলাবাহুল্য
যে আমেরিকায় স্থায়ী নাগরিক হবার জন্য ডিভি লটারী ছিল সবথেকে জনপ্রিয় এবং
সহজ পদ্ধতি। সম্ভবত ২০১০ সালের দিকে বাংলাদেশের জন্য ডিভি লটারীর কোটা পুরণ
হয়ে যায় এবং আবেদন করার সুযোগও চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় সহজ কিন্তু
সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি হচ্ছে নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে আবেদন করে নাগরিকত্ব লাভ
করা। এছাড়াও, স্থায়ী নাগরিক হবার আরও পঞ্চাশ অধিক ক্যাটেগরি আছে যেগুলোর
অধিকাংশতেই তেমন ব্যাক্তিগত এবং বুদ্ধিভিত্তিক যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হয়না।
এর কিছু ব্যাতিক্রম আছে যেমন ইনভেস্টর হিসেবে আবেদন করা যায় (৫ কোটি টাকা
আমেরিকায় নিয়ে এসে ব্যাবসায় ব্যয় করতে হয়); সংস্কৃতিতে অবদানের জন্যও আবেদন
করা যায়, ইত্যাদি। যারা এসব ক্যাটেগরির কোনোটাতেই নাগরিক হয়ে আসতে পারেনা,
তাদের বলা হয় নন-ইমিগ্র্যান্ট। এই দলের সবথেকে বড় অংশ হচ্ছে যারা
স্টুডেন্ট ভিসায় এখানে পড়তে আসে। এখানে পড়াশোনা করতে এসে হাজারো কঠিন এবং
অনিশ্চিত পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে তাদের নাগরিক হতে ৬-১২ বছর লেগে যায়। এটা যে
কেমন অভিজ্ঞতা সেটা যে উপভোগ করেনি সে অনুভব করতে পারবে না। এটা খুব খারাপ
যে তা না কিন্তু বেশ হতাশার এবং একই সাথে উত্তেজনাকর। অনেকটা ফুটবলের ৯০
মিনিটের পড়ের সময়ের মত।
যুক্তরাস্ট্রে
স্টুডেন্ট ভিসায় নিজের ভার্সিটির বাহিরে কোনো চাকরি করার সুযোগ নাই।
আপনাকে কেউ চাকরি দিতেও পারবে না কারণ আপনার ওয়ার্ক পারমিট নাই। নিজের
ক্যাম্পাসে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা চাকরি করতে পারবেন। পড়াশোনা শেষ করলে এদেশের
সরকার আপনাকে ১ থেকে ৩ বছরের ওয়ার্ক পারমিট দেয়। এটাকে বলা হয় OPT
(Optional Practical Training)। যারা বিজ্ঞান, প্রকৌশল, গণিত এবং টেকনোলজি
ব্যাগ্রাউন্ডের তাদেরকে বলা হয় STEM OPT এবং তাদের জন্য এটা ৩ বছরের। বাকি
সবাইকে বলা হয় Non STEM OPT এবং তাদের পারমিট ১ বছরের। সেই ওয়ার্ক পারমিট
নিয়ে আপনি শুধুমাত্র যে বিষয়ে ডিগ্রী নিয়েছেন সেই ধরণের চাকরিই করতে
পারবেন, এর বাইরে আর কিছু করার সুযোগ নাই। আপানার ওয়ার্ক পারমিট ১ থেকে ৩
বছর বৈধ থাকতে থাকতে আপনাকে অন্য ভিসা নিতে হবে। প্রফেশনাল চাকরি যারা করে
তাদের জন্য জনপ্রিয় ভিসা হচ্ছে H-1B, যেটা কোম্পানি স্পন্সর করে থাকে। এটা
আর একটা চ্যালেঞ্জ। এই ভিসা স্পন্সর করবে এমন কোম্পানী ম্যানেজ করতে হয়,
সবাই এটা করে না। এটা অনেকটা কঠিন ভিসা কারণ এতে দেশে যাওয়া আসা করতে গেলে
প্রতিবার ঢাকার এম্বাসিতে গিয়ে ভাইভা দিতে হয়, নতুন ভিসার সিল নিতে হয়,
নিজের বউ বাচ্চা চাকরি করার সুযোগ পায়না। H-1B ভিসার মেয়াদ ৬ বছর এবং
অধিকাংশ কোম্পানী চায় আপনি অন্তত এই ৬ বছরের ৩ বছর তাদের সাথে কাজ করেন।
এরপর আপনার দক্ষতা যাচাই বাছাই করে তাঁরা গ্রীনকার্ড করবে কি করবে সেটা
নিয়ে আপনার তাদের সাথে অনেক মিটিং ফিটিং করতে হবে। আপনার পোষালে থাকবেন না
পোষালে আপনার জন্য গ্রীনকার্ড করবে এমন প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করে সেখানে
চলে যাবেন। এতো ঝক্কিঝামেলা সামলাতে বহু বছর লেগে যায়। পাশ করার পর কারও
কারও ৩ বছর লাগতে পারে আবার কারও ৮ বছরও লাগতে পারে।
এতসব
ভোগান্তির থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে নিজে নিজে গ্রীনকার্ড এর জন্য আবেদন
করা। National Interest Waiver (NIW) EB-2 হচ্ছে নিজের গ্রীনকার্ড নিজেই
আবেদন করার একটা ক্যাটেগরি। এটাকে বলা হয় – Individual with Advanced
Degree/Exceptional Ability. এই ক্যাটেগরিতে আবেদনের নুন্যতম যোগ্যতা হচ্ছে
মাস্টার্স পাস। এবং, এই ক্যাটেগরিতে আবেদন করতে আপনার চাকরি থাকা
বাধ্যতামুলক না। এই ক্যাটেগরির সবথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনার মাস্টার্স
দুনিয়ার যেকোনো দেশ এবং ইউনিভার্সিটি থেকেই হতে পারবে। আপনি যুক্তরাস্ট্রের
বাইরে বসেই আবেদন করতে পারবেন এবং হাজার হাজার মানুষ সেটা করেই এখানে
গ্রীন কার্ড হাতে নিয়েই আসে। মুলতঃ গবেষনায় আপনার অবদান কেমন, আপনার
গবেষনার বিষয়বস্ত যুক্ত্ররাস্রটের National Interest এর সাথে ম্যাচ করে
কিনা এসব বিবেচনায় এই ক্যাটেগরিতে গ্রীন কার্ড দেয়া হয়। এখানে আপনার কোনো
প্রতিযোগী নাই, এটাতে কোনো নির্দিষ্ট কোটা নাই, এটা সরাসরি রিজেক্ট হলেও
আবার আবেদন করা যায়, এটা রিজেক্ট হলেও আপনার বর্তমান ভ্যালিড ভিসার উপর
কোনো প্রভাব থাকবে না (ব্যতিক্রম আছে)। গবেষনায় আপনার অবদান কতটা সেটা একটা
রচনা আকারে লিখে সব ডকুমেন্ট সহ জমা দিতে হয়। গবেষণায় আপনার অবদান মুলত
আপনার জার্নাল এবং কনফারেন্স পেপার এবং গুগল স্কলারে আপনার সাইটেশন সংখ্যা
দিয়ে পরিমাপ করা হয়। পাব্লিকেশনের ব্যাতিক্রম হিসেবে প্রজেক্ট এর কাজ কেও
তুলে ধরা যেতে পারে তবে পাব্লিশকেশন হচ্ছে বেশ সহজ পরিমাপক। পুরো কাজটাতে
এখন ইমিগ্রেশন লইয়ার সাহায্য করেন কিন্তু আপনার কাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ সেটা
আপনাকে নিজেকেই লিখতে হবে। এটা করতে সবমিলিয়ে ৬৫০০ – ৮৫০০ মার্কিন ডলার খরচ
হয় এবং এই টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। পুরো প্রসেস শেষ হতে ১ থেকে ২
বছর লাগে।
কি
চমকে গেলেন নাকি! এটার জন্য শ্রম দিতে আজই লেগে পড়ুন। একবার ভাবুন তো যে
আপনি দেশে ২ বছর মাস্টার্স করে এটা করে ফেললেন আর আমি ২০১৬ সালে এখানে এসে
গতমাসে এটা করেছি। আপনি চাইলেই বাংলাদেশেই মাস্টার্স করে এটা করতে পারবেন।
তবে হ্যাঁ, আপনার মাস্টার্স করার উদ্দেশ্য যদি হয় হলে ফ্রি থাকা খাওয়া আর
সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেয়া তাহলে এটায় হয়তো সফল হবেন না। আপনাকে এমন
এ্কজন প্রফেসর খুঁজে বের করতে হবে যে ভালো রিসারস করে এবং করায়। আপনার
ডেডিকেশন থাকলে আপনি পারবেন। অবশ্যই পারবেন।
*এটার
ব্যাপারে আরও জানার থাকলে অনুগ্রহ করে এখানেই মন্তব্য করুন। আপনার প্রশ্ন
আর আমার উত্তর হয়তো অনেকের প্রশ্নের উত্তর দিবে। আমাকে মেসেজ দেবার দরকার
নাই।
Thank you
Manjur Elahi
Houston, TX